প্রোডাক্ট প্রাইসিং স্ট্যাটেজি কেন প্রয়োজন?

প্রোডাক্ট প্রাইসিং স্ট্যাটেজি কেন প্রয়োজন?

প্রাইসিং বিজনেসে কতখানি গুরুত্ব বহন করে তা নিশ্চয়ই কারোই অজানা নয়

বিজনেসে উন্নতি বা অবনতি, প্রোফিট বা লসের সম্মুখীন হওয়া সবকিছুতেই একটা বড় মাপের প্রভাবক হিসেবে কাজ করে “প্রাইসিং”। প্রোডাক্ট-এর সঠিক প্রাইস নিয়ে ধারণা না থাকলে তা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে আমাদের বিজনেসে। 

বেশ কিছু বিষয় মাথায় রেখে প্রোডাক্ট-এর প্রাইসিং নির্ধারণ করতে হয়। এতে আপনার বিজনেসের প্রোফিট যেমন বাড়বে তেমনি পাবেন ক্রেতার সন্তুষ্টি। তাই আজ আমাদের আলোচনার টপিক প্রোডাক্ট প্রাইসিং। 

মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে চলুন চয়েস সম্পর্কে কিছু ধারণা লাভ করা যাক৷ একটা রিসার্চ অনুযায়ী, কাস্টমারদের অনেক বেশি চয়েস দেয়া হলে, তাদের কেনার পসিবিলিটি কমে যায় প্রায় ১০ গুণ৷ 

কিন্তু এমন টা কেনো? বুঝিয়ে বলছি…

Sheena Lyengar কলম্বিয়ার একজন নামকরা অধ্যাপক যিনি ” চয়েস” নিয়ে ১০ বছর ধরে স্টাডি করেছেন। তিনি তার জীবদ্ধশায় চমৎকার একটি পরীক্ষা চালান। যার ফলস্বরূপ আমরা পাই তার গবেষণাপত্র “When Choice is Demotivating” 

গবেষণাটি এরূপ, একটি গ্রোসারি স্টোর বা শপে একটি ফ্রি টেস্টিং বুথ স্থাপন করা হয়, যেখানে ৬টি ভিন্ন ধরণের জ্যাম রাখা হয়। দেখা যায়, ৪০% কাস্টমার সেই বুথে আসেন ও রাখা জ্যাম গুলো টেস্ট করেন। এবং সেখান থেকে ৩০% কাস্টমার জ্যাম কিনে নিয়েছেন। 

সপ্তাহ খানেক পরে, একই স্টোরে তারা আবারও  ফ্রি টেস্টিং বুথ স্থাপন করেন তবে এবার ৬ টির পরিবর্তে ২৪ টি ভিন্ন ধরণের জ্যাম রাখেন। এবার লক্ষ্য করলেন দোকানে ৬০% কাস্টমার এসে সেগুলো টেস্ট করলেও মাত্র ৩% কাস্টমার সেখান থেকে জ্যাম কেনেন। 

তবে কেন এমনটা হলো? কাস্টমার ও জ্যাম দুটোই বেশি হওয়ার পরেও সেল কেন কম হলো?

এই জরিপ বা গবেষণা আমাদেরকে যে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সাহায্য করে সেটা হলো 

  • কাস্টমারকে বেশি চয়েসের অপশন দিলে তা তাদেরকে অনেক বেশি আকর্ষণ করে ফলে ২৪ টি ভিন্ন ধরণের জ্যাম বুথে মানুষের ভিড় ছিলো অনেক। 
  • কাস্টমারদের কম চয়েস করার অপশন দিলে তারা সেটা বেশি কিনে৷ ফলে ৬ টি ভিন্ন ধরণের জ্যাম বুথে কাস্টমার কম থাকলেও সেল বেশি হয়েছিলো। 

প্রোডাক্ট প্রাইসিং খুব একটা কঠিন না হলেও অতোটা সহজ বিষয়ও না। মূলত এটি মনগড়া হওয়ার চেয়েও সাইন্টিফিক হওয়া জরুরি বেশি৷ প্রোডাক্ট ও সার্ভিসের প্রাইস ফিক্সড বা নির্ধারণ করার কিছু ট্রিপস অ্যান্ড ট্রিকস নিয়ে আজকে কথা বলবো৷ এবং সব কিছুই রিসার্চ বেইজড। ফলে আশা করছি এই প্রোডাক্ট প্রাইসিং-এর মানদণ্ডে আপনাকে মার্কেটের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখবে। 

৯ টি রিসার্চ বেজড প্রোডাক্ট প্রাইসিং ট্রিকস​

আজকের  ব্লগটি প্রোডাক্টের প্রাইস যেভাবে নির্ধারণ করলে ইফেক্টিভ হবে সেটা নিয়ে একটা ক্লিয়ার ধারণা দেবে আপনাকে। কারণ এই ৯ টি স্ট্যাটেজি কনজ্যুমার বিহেভিয়ারের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।

একই ধরনের সেল প্রাইস

একই প্রোডাক্ট বা সেবার অনেকগুলো বিকল্প প্রাইস কাস্টমারদের সেটি কিনতে নিরুৎসাহিত করে। এক্ষেত্রে অনেকেই ভাবতে পারেন একই রকম প্রোডাক্টের জন্য অভিন্ন প্রাইস ফিক্সড করাই হতে পারে পারফেক্ট সলুশন। তবে সকল ক্ষেত্রে এটিও ঠিক নয়। 

Yale University-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যদি দুইটি প্রায় সিমিলার প্রোডাক্টের প্রাইস একই ধরণের হয়, তাহলে কাস্টমারদের সেটি কেনার প্রবণতা বা ইচ্ছা ভিন্ন দামের অন্য দুটি প্রোডাক্ট-এর চেয়ে কম। 

যেমন, যখন দুটি ৬২ সেন্ট মূল্যর গামের প্যাকেটের মধ্যে কাস্টমারদেরকে একটি পছন্দ করতে বলা হলো, তখন মাত্র ৪৬% কাস্টমার সেটি ক্র‍য় করেছে। অপরদিকে গাম গুলোর প্যাকেটের মূল্য যখন আলাদা করে ৬২ ও ৬৪ সেন্ট করা হয় তখন ৭৭% কাস্টমার সেটি কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সুতরাং এর ফলে এটা বোঝা গেলো প্রাইসের ভ্যারিয়েশন বা ভিন্নতায় সেল বৃদ্ধি পায়। 

প্রাইস অ্যাংকরিং

ধরুন আপনাকে জিজ্ঞেস করা হলো আপনার এলাকার সবচেয়ে ছোট বাড়ি কোনটি? একটু লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন  এটি জিজ্ঞেস করার পর আপনি এলাকার সবচেয়ে বড় বাড়ির সাথে আপনাকে জিজ্ঞেস করা ছোট বাড়িটির তুলনা করছেন। অ্যান্ড এখানেই প্রাইস অ্যাংকরিং-এর বিশেষত্ব

যদি আপনি ২০০০ টাকা মূল্যের একটা জামা সেল করতে চান তাহলে সেটিকে ১০০০০ টাকা মুল্যের জামার পাশে রাখুন। তাহলে দেখবেন ২০০০ টাকা মূল্যের জামাটি সেল হয়ে যাবে। 

আসলে এখানে ফ্যাক্ট হলো মানুষ যখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার মন স্থীর করে তখন একটি ডেটাকে রেফারেন্স হিসেবে চিন্তা করে বাকি চিত্র পর্যালোচনা করে থাকে। রেফারেন্স হিসেবে সে প্রথমে প্রাপ্ত ডেটার সাথে সেটিকে তুলনা করে এবং এটি সিদ্ধান্ত গ্রহনের প্রক্রিয়ায় মোটাদাগে ভুমিকা রাখে।

উপরের চিত্রটি দেখলে বুঝবেন, প্রোডাক্টের প্রাইস যখন স্বাভাবিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে তখন ক্রেতার চিন্তায় তেমন কোন ইফেক্ট পড়েনি। কিন্তু পাশের চিত্র অনুযায়ী একই প্রোডাক্টের মূল্য ৬০০ ডলার উল্লেখ করে যখন সেটির উপর ডিস্কাউন্ট ট্যাগ লাগানো হয়েছে তখনই সেল বেড়ে গেছে। কারণ ক্রেতা ডিসকাউন্ট প্রাইসকে অরিজিনাল প্রাইসের সাথে তুলনা করেছে। এমনকি এক্ষেত্রে আমরা অবচেতন মনে প্রোডাক্টের আসল মূল্য যে ৬০০ ডলার সেটাও মেনে নিয়েছি। 

আর এখানেই প্রাইস অ্যাংকরিং পুরো গেমকে চ্যাঞ্জ করে দিতে পারে। এটি আমাদের একজন ক্রেতা হিসেবে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রাপ্ত ডেটাকে প্রভাবিত করে এবং অলটারনেটিভ ডেটার মধ্যে একটিকে গ্রহণ করার সাপেক্ষে যুক্তি তৈরি করে। 

 ওয়েবার ল 

বিজনেস ফিল্ডে যারা আছেন তাদের এই বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি বেগ পেতে হয়। যেমন একটি প্রোডাক্ট-এর মূল্য কতটুকু বাড়ালে সেটি কাস্টমারদের আকর্ষণ করে বা করে না। এক্ষেত্রে, আপনি একটি ইচ্ছেমাফিক সংখ্যা বলে দিতে পারেন তবে সেটা যুক্তি নির্ভর না। 

আপনার প্রোডাক্টের প্রাইস কতটুকু বাড়াবেন বা আদৌ বাড়াবেন কিনা সেটা সম্পূর্ণ আপনার বিষয়, তবে কাস্টমার সেটিকে কিভাবে গ্রহণ করবে সেটিও আপনার ভাবার বিষয়। তাহলে প্রোডাক্টের প্রাইস কম বা বেশি সেটি নির্ধারণ করবো কিভাবে? প্রশ্ন থেকেই যায়…

ঠিক এখানে একটি ইন্টারেস্টিং সূত্র নিয়ে আলোচনা করবো। ওয়েবার ল বলে, একটি স্টিমুলাসের পরিবর্তন যে মাত্রায় লক্ষনীয় হয় তা মূল স্টিমুলাসের একটু ধ্রুবক অনুপাত। 

মাথার উপর দিয়ে গেলো?

বুঝিয়ে বলছি…

বোঝার জন্য বিষয় টি একটি সহজ উদাহরণ নিয়ে বলা যাক। 

মনে করুন আপনি চোখ বন্ধ বা বাধা অবস্থায় ডান হাতে ৩ কেজি ওজনের একটি বস্তু ধরলেন। এবার সেটি নামিয়ে ৩.০৫ কেজি ওজনের আর একটি বস্তু আপনাকে দেয়া হলো। অর্থাৎ পরবর্তী বস্তুটির ওজন ছিল পূর্বের বস্তুটির চেয়ে ০.০৫ বা আধ কেজি বেশি। এমতাবস্থায় আপনি কিন্তু কোন পরিবর্তিত ওজন অনুভব করবেন না যদিও পরের বস্তুটি ছিল হাফ কেজি বেশি ওজনের৷ 

তবে এখানে যদি পরবর্তীতে আপনাকে ১.২ কেজি ওজনের বস্তু দেয়া হয় সেটার পার্থক্য আপনি ঠিকই বুঝতে পারবেন।  

আর এই ট্রিক-টিই  কাস্টমারদের কাছে  ‘ল’ প্রোডাক্টের মূল্য পরিবর্তনের পার্থক্য লক্ষনীয় করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন একটি প্রোডাক্টের মূল্য যদি ৩১০০ টাকা হয় এবং ছাড় দিয়ে যদি সেটিকে ৩০০০ টাকা করে দেয়া হয় তাহলে সেটি কাস্টমারদের নজরে আসবে না। উপরন্তু ৩০০০ টাকার পন্য বা প্রোডাক্ট যদি মূল্য ছাড়ে ২৯৯৯ টাকা করা হয় তবে এখানেই সেলের পরিমাণ বাড়বে কয়েক গুণ। 

নিচের চিত্রটি দেখলেই বুঝবেন, দুটি ক্ষেত্রেই মূল্যে ছাড়ের পার্থক্য ১ ডলার কিন্তু প্রথমটির বেজ মূল্য কম ও পরেরটির বেজ মূল্য বেশি। তার মানে ওয়েবার “ল” এর মূল মেসেজ হলো ‘পরিবর্তন হতে হবে লক্ষনীয়’।

 পেইন পয়েন্ট আইডেনটিফাই করা ও তা কমানোর চেষ্টা করা

এখানে বেশ মজাদার একটা টপিক নিয়ে কথা বলবো। কার্নেগি মেলন, স্ট্যানফোর্ড এবং এমআইটি-র গবেষকদের মতে, মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত না ব্যথা অনুভব করে, ততক্ষণ অর্থ ব্যয় করে। 

মূলত অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রভাব ফেলে এমন মানসিক প্রক্রিয়া গুলো পর্যবেক্ষন করা হয় এই গবেষণায়। 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তাদের গবেষণা দ্বারা এটা বোঝা সহজ হয় যে, কেন মানুষ নগদ অর্থ খরচ করার চেয়ে অনলাইন কারেন্সি বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বেশি ব্যয় করে৷ যারা ইতোমধ্যে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেছেন বা করছেন তাদের কাছে বিষয়টি বোঝা খুব সহজ হবে আশা করি। 

“ক্রেডিট কার্ড মানুষের অর্থ প্রদানের যন্ত্রণাকে চেতনানাশক করে তোলে” – কথাটি বলেছেন জর্জ লোয়েন্সটাইন, যিনি কার্নেগি মেলনে সোশ্যাল অ্যান্ড গবেষণা পেপারের সহ-লেখক। 

আপনি যখন কার্ড বা অনলাইনে পেমেন্ট করেন তখন এই অনুভূতি হয় না যে আপনি কেনার জন্য টাকা খরচ করছেন। কিন্তু একই জিনিস কেনার ক্ষেত্রে যখন আপনি নগদ বা ফিজিক্যাল কারেন্সি ব্যবহার করেন তখন এই অনুভূতি হয় বিপরীত। 

এই গবেষণায় ২৬ জন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিকে ২০ ডলার করে দেয়া হয় কিছু কেনার জন্য, অপশন হিসেবে রাখা হয় তারা চাইলে ডলারটা ব্যয় না করে সেটা নিজের কাছেও রেখে দিতে পারে। 

আর তাদেরকে প্রোডাক্ট দেখানোর  প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয় “ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রিজনান্স ইমেজিং স্ক্যানার” এর মধ্যে শুইয়ে রেখে। এর মাধ্যমে জানার চেষ্টা করা হয়, তারা যখন প্রোডাক্টগুলি দেখে সেটি কেনা বা না কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সময় মস্তিষ্কের কোন অংশগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে। মস্তিষ্কের পেইন সেন্টার গুলো এক্ষেত্রে কিরূপ প্রতিক্রিয়া করে সেটাই জানা মূলত প্রধান লক্ষ্য ছিলো। 

লোয়েনস্টাইন বলেন, ” যখন আমরা প্রথম স্ক্যানের ফলাফল পেয়েছিলাম তখন খুব উত্তেজিত ছিলাম ও দেখছিলাম সেই ব্যক্তি যখন প্রোডাক্টের প্রাইস দেখেছে তখন তার “ইনসুলা” যা ব্যথা প্রক্রিয়াকরণের সাথে যুক্ত মস্তিষ্কের একটি অংশ সেটি সক্রিয় হয়েছে। আর এটা জানতে পারা আমাদের জন্য একটি অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল।

গবেষণা অনুযায়ী, আপনার প্রোডাক্ট এর প্রাইসিং এমন ভাবে নির্ধারন করুন যাতে গ্রাহক সেটি কিনতে পেইন অনুভব না করে। কিন্তু কিভাবে সেটা করা সম্ভব? 

চলুন কথা বলা যাক সেটা নিয়ে। 

ভিন্নভাবে প্রোডাক্টের মূল্যকে সাজান :

ধরুন, আপনি একটা কম্পিউটার সেল করবেন  যার মূল্য ২০,০০০ টাকা। যেটি একসাথে দিতে কাস্টমারের বেগ পেতে হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি সেটা মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ করে দেন তাহলে কাস্টমার সেটা কিনতে পেইন অনুভব করবে না। যদিও  দিনশেষে আপনি একই মূল্য পাচ্ছেন। 

প্যাকেজ আকারে 

মনে করুন, কেউ একটি গাড়ি কিনবে। কিন্তু সেটি কেনার পর সাউন্ড সিস্টেম লাগানো, সিট কভার লাগানো বা অন্যান্য ডেকোরেশনে অনেক ব্যয় হবে। এখন খরচ গুলো আলাদাভাবে বহন করতে গেলে সেটা কাস্টমারের বেশি মনে হবে তাই যদি এ সব কিছুকে একটা প্যাকেজের মধ্যে রাখা যায় এবং একসাথে এর মূল্য নির্ধারন করা যায় তাহলে কাস্টমার সেটা গ্রহণ করতে পেইন ফিল করবে না 

এপিল টু ইউটিলিটি 

ভাষা বা কথার ভঙ্গি পরিবর্তন করে কাস্টমারদের পেইন লাঘব করা যায়। যেমন ধরুন, আপনি ব্যাক ম্যাসাজার সেল করেন। প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশনে আপনি লিখলেন “ব্যাক ম্যাসাজার আপনার ব্যাক পেইন দূর করবে”। তবে কথাটা যদি এমন হয় “ব্যাক ম্যাসাজার আপনাকে প্রশান্তি এনে দেবে” তাহলে এটিতে কাস্টমার বেশি আকৃষ্ট হবে। কারণ ২য় কথাটি পড়েই কাস্টমার তার মস্তিষ্কে প্রশান্তি অনুভব করে। কেননা এই বাক্য কাস্টমারের কাছে প্রাইসের চেয়ে তার প্রয়োজনীয়তাকে বেশি ফোকাস করে। 

ফ্রি শব্দের ব্যবহার করুন 

মানুষ ফ্রি পেতে ভালোবাসে। আর ক্রেতা হলে তো আর কথাই নেই। কিন্তু আপনি তো প্রোডাক্ট ফ্রি দিতে যাবেন না, এক্ষেত্রে  চেষ্টা করুন বিভিন্ন অকেশনে ডেলিভারি চার্জ ফ্রি দিতে। “ফ্রি” শব্দটি খুব শক্তিশালী ও আকর্ষণীয় একটি শব্দ। এটি কাস্টমারের মনে জেতার অনুভূতি সৃষ্টি করে। 

সংখ্যা ৯ ব্যবহার করুন

আপনি কি জানেন নির্ধারিত মূল্যের শেষে সংখ্যা ৯-এর ব্যবহার সেল বেশি হওয়ার কারণগুলোর একটি৷ এমনকি এমন ও নজির আছে  যদিও সেই প্রোডাক্টের মূল্য তার চেয়েও কম তবে শেষে ৯ যুক্ত করা মূল্য বেশি হলেও সেল হয়েছে অনেক। 

আসলে প্রাইসের শেষে সংখ্যা ৯ ব্যবহার একটি পুরনো পদ্ধতি, তবে এটি খুব কার্যকরী। 

বিক্রয়মূল্য – ” ১২০ টাকা, কিন্তু এখন মাত্র ৮০ টাকা! এমন মূল্য নির্ধারণ সেল বাড়াতে খুবই ফলপ্রসূ তবে তখন সেই একই প্রোডাক্টের মূল্য নির্ধারন করা হয়েছে ৯৯ টাকায় তখন কাস্টমার সেটিকে আরও বেশি পরিমাণে গ্রহণ করেছে। 

সময়কে মূল্য দিন 

এক শনিবার বিকালে সান ফ্রান্সিসকোতে মোগিলনার ও তার কো রাইটারের কিছু ছেলেরা একটি পার্কে পথের ধারে লেবু পানি বিক্রয় করার উদ্দেশ্যে বের হয়। 

মোগিলনার ছেলেদের বলে, তারা লেবু পানি সেল করার সময় তিনটি শ্লোগান ১০ মিনিট পর পর পর্যায় ক্রমে বলবে। 

শ্লোগান গুলো হলো 

১. একটু সময় ব্যয় করুন ও সি অ্যান্ড ডি’র লেবু পানি পান করুন। 

২. একটু টাকা খরচ করুন, এবং সি অ্যান্ড ডি’র লেবু পানি পান করুন।

৩. সি অ্যান্ড ডি’র লেবু পানি পান করুন। 

আর এই লেবু পানি পান করার জন্য ১ থেকে ৩ ডলারের মধ্যে যেকোনো মূল্য কাস্টমার পরিশোধ করতে পারবে। 

অবশেষে দেখা গেলো সেই পথ ধরে ৩৯১ জন হেঁটে যায়, যার মধ্যে ৪০ জন কাস্টমার হিসেবে লেবু পানি পান করে। রেজাল্ট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, “একটু একটু সময় ব্যয় করুন ও সি অ্যান্ড ডি’র লেবু পানি পান করুন অর্থাৎ ১ম ম্যাসেজ টাতেই মানুষ সবচেয়ে বেশি সাড়া দিয়েছে। এমনকি তারা বেশি টাকা দেয় ও সন্তুষ্টি প্রকাশ করে।

এই গবেষণাটি আমাদেরকে দারূন একটা বিষয় শেখায়, আপনি যদি প্রোডাক্ট ও সার্ভিসকে সময়ের সাথে সম্পর্কিত বা রিলেট করে মূল্য নির্ধারণে সক্ষম হন, তবে কাস্টমার সেটির প্রতি বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে। 

আর এই কারণেই জগতখ্যাত রোলেক্স ঘড়ির অ্যাডগুলো টাইম রিলেটেড থিম ব্যবহার করে নির্মিত। সেই সাথে আরও একটি বিষয় রয়েছে, তা হলো “পারফেকশন ডিম্যান্ড প্রাইস” এবং এখানেও এই কারণেই লাক্সারি প্রোডাক্ট কেনার সময় মানুষ দামাদামি করে না। 

যেমন : রোল্পস রয়েলস, ম্যাকবুক সব সময় সেরা প্রোডাক্ট তৈরি করে ও কাস্টমার সেটার জন্য উপযুক্ত মূল্য পরিশোধ করতে দ্বিতীয় বার ভাবে না। 

 প্রাইস কম্পেয়াস না করা 

আচ্ছা বলুন তো, আপনি যখন মেডিসিন কিনতে ডিসপেনসারিতে যান আর দোকানদার যদি আপনাকে কম মূল্যে ওষুধ অফার করে এবং যদি বলে এটি বাজারে সবচেয়ে সস্তা। তখন কি আপনি এই সস্তা ওষুধ কেনার ঝুঁকি নিবেন?

অবশ্যই না! 

স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় এসেছে, অনেক সময় কাস্টমারকে অন্য সেলারের সাথে আপনার প্রোডাক্টের মূল্য তুলনা করাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করেছেন৷ কারণ এতে করে আপনি আপনার পটেনশিয়াল কাস্টমার হারাতে পারেন। প্রোডাক্টের মূল্য তুলনা করতে বললে কাস্টমারের মনে আপনার প্রোডাক্টের কোয়ালিটি ও আপনার লয়েলিটি নিয়েও প্রশ্ন জাগতে পারে। তাই অন্তত এদিকে রিস্ক না নেয়াই উত্তম। 

 দৃষ্টিভঙ্গি

মাঝে মাঝে দৃষ্টিভঙ্গি বিজনেসে ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে। অর্থনীতিবিদ রিচার্ড থ্যালারের একটি পরীক্ষা বিশ্লেষন করে দেখা যেতে পারে, যা তিনি কয়েক বছর আগে করেছিলেন৷ কাস্টমার বুডউইজারের জন্য (USA-এর একটি বেস্ট সেলিং বিয়ার) চড়া মূল্য দিতে রাজি, যদি তারা জানেন এটা ফাইভ স্টার হোটেল থেকে আনা হয়েছে, কোনো সাধারণ মুদি দোকান থেকে নয়। 

থ্যালার বলেন, ব্যাখ্যাটি খুব সরল। ফাইভ স্টার হোটেলের অনুভূতি এটির জন্য বেশি মূল্য পরিশোধ করার কারণ বা প্রভাবক, যা আপনার ব্রেইনকে টাকা বা মূল্য দিয়ে চিন্তা করতে দেয় না৷ আর এই কারণেই আমরা নরমাল দোকালে সেল করা ২০ টাকার ড্রিংক্স বা পানীয়, একটি দামি রেস্টুরেন্টে ৫০ টাকা খরচ করে পান করি। 

এখানে সম্মানের সাথে রিলেটেড দৃষ্টিভঙ্গি জড়িত। 

 প্রাইসের লিখিত ফরম্যাট ইজি রাখা 

যে শব্দগুলোতে বেশি অক্ষর রয়েছে সেগুলো কাস্টমারদের কাছে অনেক বেশি মনে হয়েছে। শুনতে অদ্ভুত লাগছে? তবে  এটি আমার কথা নয়। জার্নাল অফ কনজিমার সাইকোলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণার ব্যাখ্যা এটি। 

যে ফরম্যাট গুলো দিয়ে তারা পরীক্ষাটি চালিয়েছে সেটা নিম্নরূপ 

  • $ ১,৪৯৯.০০
  • $ ১,৪৯৯
  • $ ১৪৯৯ 

উপরের যে তিনটি প্রাইস দেখতে পাচ্ছেন সেখান থেকে ১ম দুটির প্রাইস কাস্টমারদের কাছে বেশি মনে হয়েছে যদিও তিনটির মূল্য একই৷ এর কারণ হলো সেগুলোর লিখিত ফরম্যাট। উপরের দুটি প্রাইস ৩ নম্বরটির চেয়ে তুলনামূলক দীর্ঘ একই সাথে উচ্চারণে বেশি শব্দ ইউজ করতে হয়। 

অবশেষে, 

একটি সেরা প্রোডাক্টের মূল্য নির্ধারণ কর‍তে হয় অনেক কিছুর উপর ভিত্তি করে। কেবল প্রোডাক্ট ভ্যালু ও প্রাইসকে একত্রিত করলেই হবে না, একই সাথে আপনাকে বুঝতে হবে কাস্টমারদের বিহেভিয়ার৷ 

কাস্টমার ঠিক কোন কারণে, কি ধরণের প্রোডাক্টের উপর কি টাইপ্স মূল্য পছন্দ করে আবার কেন তারা বিনা অজুহাতে বেশি মূল্য পরিশোধ করে বা অনেকক্ষেত্রে কেন তারা কম মূল্য দেয়ার জন্য বারগেইন করে। এসকল বিষয় বোঝার চেষ্টা করুন। 

আপনার প্রোডাক্ট প্রাইসিং স্ট্যাটেজি নির্ভর করবে আপনার কাস্টমারদের আচরন বিশ্লেষণের উপর। আপনি নিশ্চয়ই জানেন বিশ্বসেরা ব্রান্ড হওয়ার পেছনে এসব খুঁটিনাটি বিষয়ে কতোটা সচেতন থাকতে হয় আর সেখানে নিজের বিজনেসের প্রোডাক্ট প্রাইসিং একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটিকে ইগনোর করার কোন উপায় নেই। 

একটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি যারা ভাবেন ই-কমার্স বা অনলাইন ভিত্তিক  বিজনেস তেমন কোন কঠিন বিষয় না, তাদের জন্য ম্যাসেজ, শুরু থেকেই প্রতিটি বিষয়ে নলেজ রেখে আগানো উচিত৷ ই-কমার্স একই সাথে আর্ট ও সাইন্সের মিশ্রণ। সো আপনার বিজনেজ গবেষণাভিত্তিক না হলে খুব সহজেই আপনি পিছলে যেতে পারেন।  

Trending Blog
প্রোডাক্ট প্রাইসিং স্ট্যাটেজি কেন প্রয়োজন?
ফেসবুকে অ্যাড দিচ্ছেন কিন্তু সেল হচ্ছে না? 
ঈদ আয়োজনে ব্যবসায়িক প্রস্তুতি কীভাবে নিবেন?
একটি ওয়েবসাইট একজন উদ্যোক্তাকে কিভাবে সাহায্য করে?

Share:
Facebook
Twitter
LinkedIn
Scroll to Top