ঈদ আয়োজনে ব্যবসায়িক প্রস্তুতি কীভাবে নিবেন?

ঈদ আয়োজনে ব্যবসায়িক প্রস্তুতি কীভাবে নিবেন?

প্রতিটি কাজের নির্দিষ্ট সময় থাকে। থাকে সুনির্দিষ্ট চাহিদা। সময়রের কাজ সময়ে করতে পারলে যেমন চাহিদা পূরণ হয় তেমন কাজের আবেদন পায় যথার্থ মর্যাদা।

বিজনেস ও বিজনেসম্যানদের জন্য সঠিক সময়ে সঠিক কাজের স্বীদ্ধান্ত নিতে পারা একধরনের চ্যালেঞ্জ৷ এই চ্যালেঞ্জ যে বা যারা যতদ্রুত ও যত সুন্দরভাবে মোকাবিলা করতে পারে তারা তত দ্রুত সফলতার চুড়ায় পৌঁছাতে পারে।

সামনে পবিত্র ঈদুল ফিতর। আমাদের দেশ ও দেশের মানুষের প্রেক্ষাপটে ঈদ কেন্দ্রিক কেনা-বেচার একটি বিশেষ প্রবণতা দেখা যায়। মানুষ সারাবছর কিছু কিনুক আর না কিনুক ঈদে নিজ নিজ সাধ্যানুযায়ী পোষাক থেকে শুরু করে খাদ্যদ্রব্য, প্রসাধনী, ঘর সাজানোর তৈজসপত্র ইত্যাদি কিনে থাকেন।

এখন ঈদ কে কেন্দ্র করে বাণিজ্যিক যে ব্যাপার স্যাপার গড়ে ওঠে এখানে আপনি কীভাবে নিজের বিজনেসকে প্রেজেন্ট করবেন এবং সর্বাধিক ফায়দা অর্জন করবেন এটাই হচ্ছে বড় ভাবনা আলোচনা ও প্ল্যানিংয়ের বিষয়।

প্ল্যানিং বা আলোচনার আগে আমরা কিছু ডেটা বা তথ্য নিয়ে আলোচনা করি।

ফেসবুক মেটার তথ্যমতে প্রায় ২ বিলিয়ন মানুষ প্রতি বছর রমজান পালন করে থাকেন। ২ বিলিয়ন! মানে বুঝছেন? ২০০ কোটি মানুষ রমজান পালন করে থাকে। রমজান বা ঈদ কেন্দ্রিক অডিয়েন্স ও তাহলে প্রায় ২০০ কোটি। এদের মধ্যে ইন্সটাগ্রাম ও ফেসবুক কমিউনিটি তে ১৩.৪ মিলিয়ন মানুষ একে অপরের সাথে কানেক্টেড থাকে। তাহলে ফেসবুক-ইন্সটাগ্রামে যারা বিজনেস করছেন তারা মোটামোটি ১৩.৪ মিলিয়ন রমজান কেন্দ্রিক অডিয়েন্স পাচ্ছেন।

★ ২০২২ সালে ফেসবুক মেটার জরিপে দেখা যায় প্রায় ৬৬% ক্রেতা কেনাকাটার আগে অনলাইন ভিডিও দেখে ক্রয় করে এবং ৬৪% ক্রেতা ভিডিও অ্যাড দেখে প্রোডাক্ট কিনতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।

★ রমজান এবং ঈদে প্রতি ১০ জনে ৭ জন বিজনেস পেজে ম্যাসেজ এর মাধ্যমে কেনাকাটা করে থাকেন। ৫৮% ক্রেতা বলেছেন ফেসবুক এবং ইন্সটাগ্রামে যেকোনো ব্র্যান্ড এর রমজান এবং ঈদের প্রমশনাল অ্যাড দেখে কেনাকাটা করতে আগ্রহ দেখিয়েছেন।

★২০২২ সালে ৬৫% মানুষ ফেসবুক অ্যাড দেখে এই প্লাটফর্ম থেকে কেনাকাটা করেছেন।

এই ডেটাগুলো শেয়ার করলাম বিজনেসের ক্ষেত্রে ফেসবুক কতটা গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম সেটা বুঝানোর জন্য।

এখন ঈদ কেন্দ্রিক বাণিজ্যিক প্ল্যানের ক্ষেত্রে পুরো বিজনেস কে আমরা তিনটি বিশেষ ভাগে ভাগ করে আলোচনা করব।

১. পণ্য নির্ধারণ করা ও পণ্যের মান ভালো রাখা।
২. কখন থেকে মার্কেটিং শুরু করবেন এবং কেন?
৩. কীভাবে মার্কেটিং করবেন?

পণ্য নির্ধারণ করা ও পণ্যের মান ভালো রাখা

প্রথম কথা হচ্ছে ঈদ বিজনেসের সময়টা শুধুমাত্র আপনার পণ্য বিক্রিরই সময় না বরং আপনার ব্র্যান্ড এওয়ার্নেস তৈরী, পরিচিতি ও আস্থা অর্জনেরও সময়। কারণ যেহেতু এই ঈদ কেন্দ্র করে আপনি কারো নিকট পৌঁছাবেন সুতরাং প্রথম লেনদেনটা এমন হওয়া উচিত যেন পরবর্তীতে সে আপনার রিটার্ন কাস্টমারে পরিণত হয়। এক্ষেত্রে কোন পণ্য নিয়ে কাজ করবেন সেটা ঠিক করতে হবে এবং পণ্যের মান যেন খারাপ নাহয় সেদিকে মনযোগ রাখতে হবে।

এখন এমন যদি হয় যে আপনি যে পণ্য নিয়ে কাজ করছেন ঈদে তার বিশেষ চাহিদা নাই। তাহলে কী করবেন?
সাধারণত ঈদ কেন্দ্রিক সকল পণ্যই বিক্রি হয়। যেগুলোর চাহিদা আছে সেগুলো এমনি এমনিই বিক্রি হয়। আর যেগুলোর চাহিদা নাই সেগুলোর চাহিদা সৃষ্টি করা হয়।

একটু অবাক হচ্ছেন তাইনা? চাহিদা না থাকলে চাহিদা সৃষ্টি করে কীভাবে? একটু খেয়াল করলে বুঝবেন এই ঈদ কেন্দ্র করে মোটরসাইকেল, টিভি, কম্পিউটার ইত্যাদি ইলেকট্রিক পণ্যের ব্যাপক বেচা বিক্রি হয়। কেন এমন হয় জানেন?

এসব পণ্যের চাহিদা মোটামুটি সবসময় থাকলেও ঈদ কেন্দ্রিক বিশেষ চাহিদা সৃষ্টি করা হয়। অথচ ঈদের সাথে এর বিশেষ সম্পর্ক থাকেনা যেমন সম্পর্ক থাকে পোষাক কিংবা খাবার সামগ্রীর সাথে। এই চাহিদা কোম্পানিগুলো তৈরী করে বিভিন্ন অফার ও ডিসকাউন্টের মাধ্যমে। সো আপনাকেও এমনটা করতে হবে। আপনি যে আইটেম নিয়েই কাজ করেন না কেন ঈদ কেন্দ্রিক এর বিশেষ চাহিদা তৈরী করতে হবে।

পণ্য যখন নির্ধারণ করা হল এবার আমরা জানব কখন থেকে মার্কেটিং করব এবং কেন করব।

কখন থেকে মার্কেটিং শুরু করবেন এবং কেন?

দেখেন আমাদের দেশে ঈদের কেনাকাটা শুরু হয় মোটামুটি রমজানের শুরু থেকে বা দু একদিন আগে পরে থেকে। এখন আপনার পণ্য বা ব্র্যান্ডের পরিচিতি রমজানের আগেই কাস্টমারের কাছে পৌঁছাতে হবে।

রমজানের মোটামুটি এক দেড়মাস সময় আছে। এখন থেকেই আপনার মার্কেটিং শুরু করুন। মার্কেটিংয়ের জন্য ইনভেস্ট করুন। এত আগে মার্কেটিং করতে বলার কারণটা কি জানেন?

এখন থেকে মার্কেটিং করলে এখনই ঈদের কাস্টমার পাবেন কিনা এর কোন নিশ্চয়তা নেই। বা স্পেসিফিক যদি বলি তেমন কাস্টমার পাবেন না। বাট তারপরও এত আগে মার্কেটিং করার কথা বলার কারণ হল এখন থেকে যদি কাস্টমারের সামনে ঈদ অফার বা ঈদের পণ্য নিয়ে বারবার আপনি যেতে পারেন তাহলে কাস্টমারের কেনার সময় সে সবার আগে আপনাকেই নক করবে।

একটু উদাহরণ দিলে বুঝবেন। টেন মিনিট স্কুল শিক্ষামূলক কোর্স বিক্রি করে। তাদের এড আমাদের সামনে প্রায়ই আসে। অথচ আমরা অধিকাংশই তাদের কোর্স কিনিনা। এতদাসত্বেও তারা কেন বারবার আমাদের সামনে এড দেখিয়ে তাদের ডলার ইনভেস্ট করছেন ভেবে দেখেছেন?

এর কারণ হল তারা তাদের সার্ভিসটা বারবার আমাদের সামনে প্রেজেন্ট করে তাদের সার্ভিসকে আমাদের মস্তিষ্কে গেঁথে দিচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে কখনো যদি আমার ইংরেজি শেখার প্রয়োজন হয় তাহলে সবার আগে যে কোর্সের কথা মনে আসবে সেটা হল টেন মিনিট স্কুলের মুনজেরিন শহিদের স্পোকেন ইংলিশের কোর্স। কেননা এতদিন যাবৎ এড দেখিয়ে তারা আমার মনে জায়গা করে নিয়েছে।

ঈদ মার্কেটিংয়ের বিষয়টাও ঠিক এমনই। এখন থেকে বারবার কাস্টমারের সামনে আপনার পণ্য পৌঁছাতে শুরু করুন। যখন তাদের কেনার সময় হবে অবশ্যই আপনার থেকে কিনবে।

সো এই ঈদে যদি মার্কেটে বিজনেস করতে চান এখনই স্ট্র্যাটেজি বিল্ড করে মার্কেটিং শুরু করুন।

মার্কেটিং তো শুরু করব বাট কীভাবে করব? এমন প্রশ্ন হয়ত মনে ঘুরপাক খাচ্ছে তাইনা? চলুন দেখি কী সমাধান পাওয়া যায়।

কীভাবে মার্কেটিং করবেন?

মার্কেটিং মানেই হচ্ছে প্রচার। বারবার জানান দেওয়া। এই প্রচার বা জানান দেওয়াটা হতে হবে বেস্ট ওয়ে তে।

তিনটি বেটার জিনিস নিয়ে মার্কেটিং শুরু করতে হবে

১. বেটার কন্টেন্ট।
২. বেটার ফটোগ্রাফি।
৩. বেটার ভিডিওগ্রাফি।

এই তিনটি বেটার জিনিস নিয়ে যদি মার্কেটিং শুরু করতে পারেন তবে বলা যায় আপনি দিনশেষে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। পাশাপাশি রিটার্গেটিং এডের মাধ্যমে বারবার কাস্টমারদের কাছে পৌঁছাতে হবে। এক্ষেত্রে এবি টেস্ট করে যেটার রেসপন্স ভালো আসে সেটাতে পুরা ইনভেস্টমেন্ট খরচ করা যেতে পারে।

ঈদ কেন্দ্রিক মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় খুব কার্যকর। সেটা হচ্ছে অফার ডিসকাউন্ট পুরষ্কার রাখা। অর্থাৎ আপনি যে পণ্যই বিক্রি করেন না কেন তাতে অফার ডিসকাউন্ট পুরষ্কার  ইত্যাদি দিয়ে ভ্যালু এড করার চেষ্টা করবেন। পোস্টারে অফার ডিসকাউন্ট পুরষ্কার এই শব্দগুলো চিত্তাকর্ষক ভাবে এড করতে হবে।

মার্কেটিংই একটি ইম্পর্ট্যান্ট ফ্যাক্টর সেখানে সিজন ভিত্তিক মার্কেটিং আরো গুরুত্বপূর্ণ ও আবেদনপূর্ণ। নরমাল সময়ের মার্কেটিং আর বিশেষ বিশেষ সময়ের মার্কেটিংয়ে অবশ্যই কিছু পার্থক্য থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। তারপরও ঈদ কেন্দ্রিক মার্কেটিং কীভাবে করবেন তার একটা ধারণা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। তবে মার্কেটিংয়ের বিষয় এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়৷ আরো অনেক কথা আছে এর মধ্যে। আছে হাজার হাজার প্ল্যান। ইনশাআল্লাহ সময় করে আরো আলোচনা করা যাবে। আপনি যদি একজন নতুন ক্ষুদে উদ্যোক্তা হয়ে থাকেন তবে এতটুকু পরিকল্পিত ভাবে কার্যকর করতে পারলে সফলতা আপনার কাছে ধরা দিবে ইনশাআল্লাহ।

ঈদ মার্কেটিং নিয়ে আরো বিস্তারিত বিষয়াদি জানতে সোশ্যালগীকের সাথেই থাকুন এবং স্পেসিফিক আপনার বিজনেসের জন্য আমাদের অভিজ্ঞ মার্কেটার ও কনসালটেন্টদের থেকে ফ্রী কনসালটেন্সি নিতে যোগাযোগ করুন।

ইউটিউব টিউটোরিয়াল দেখে ফেসবুকে বুস্ট করতে পারা আর ফেসবুক মার্কেটার হওয়া এক কথা না ভাই! জ্বর হলে নাপা ওষুধ তো সবাই খেতে পারে বাট এন্টিবায়োটিক কি সবাই নিজ মন মতো খেতে পারে? এজন্য অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ওষুধ খেতে হয়!

প্রত্যেক কাজের জন্য আলাদা লোক থাকবে এটাই স্বাভাবিক! পেশাদারি বলেও তো একটা বিষয় আছে তাইনা? এখন আপনি যদি মার্কেটিংয়ের ম না বুঝে বুস্ট নাউ বাটনে ক্লিক করে মার্কেটার হয়ে যান তাহলে তো আর হবেনা!

আমাদের কাছে এমন বহু গল্প আছে যে বুস্ট করতে পারে বলেই মার্কেটার দাবীদার ব্যক্তির হাতে পেজ দিয়ে টাকা পেজ সব গর্তে ফেলেছে । আমাদের কাস্টমাররা আমাদের সাথে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। সেইসব অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি যাকে তাকে দিয়ে ফেসবুক মার্কেটিং করাবেন না। আপনার টাকা আপনার কাছে মূল্যবান বলে আপনার কষ্ট লাগবে বাট বুস্ট নাউ বাটনে ক্লিক করে মার্কেটিং করা মার্কেটারের কাছে না।

যাহোক! সোশ্যালগীক দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় অভিজ্ঞ ও দক্ষ মার্কেটার দ্বারা মার্কেটিং সার্ভিস প্রদান করছে। আমাদের মার্কেটাররা শুধু মার্কেটিংই করেন না। প্রতিনিয়ত লার্নিং ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করে কাস্টমারকে হেল্প করে। পাশাপাশি কাস্টমারের ল্যাকিনসগুলো চিহ্নিত করে তাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। মার্কেটিং রিলেটেড সহযোগিতা বা কনসালটেন্সি পেতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

ঈদ বাণিজ্যের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তো?

ফসল বোনা ও ঘরে তোলার যেমন ভিন্ন ভিন্ন সিজন থাকে তেমনই ব্যবসার প্রচার ও বিক্রিরও আলাদা আলাদা সময় থাকে। আপনি ফসল বোনার সময় যদি পরিশ্রম না করেন কখনই ফসল তোলার সময় আনন্দ নিয়ে ঘরে ফসল তুলতে পারবেন না। ব্যবসার মার্কেটিং টাইমা না বুঝলে পিক টাইমে ভালো ফলাফল অসম্ভব।

সামনে আর মাস খানিক বাদেই রোজা তারপর ঈদ। ঈদ ও রোজাকে কেন্দ্র করে কেনা-বেচার একটা হিড়িক পড়ে আমাদের সমাজে। ওই সময়টাকে ব্যবসারই সময় বলা যায়। আপনি যদি রমজান ও ঈদে ভালো বেচা বিক্রি করতে চান তবে মার্কেটিং শুরু করতে হবে এখনই।

এখনই কাস্টমার নিডগ্যাপ বা কাস্টমারের প্রয়োজন দরকার বুঝে পুরোদমে মার্কেটিং শুরু করুন। যদি ঈদ তো অনেক দেরী আছে ভেবে বসে থাকেন তবে যতদিন বসে থাকবেন ততই পিছনে পড়বেন আপনি। এই ঈদ ও রোজাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায় বিক্রি বাড়াতে সোশ্যালগীকের ফ্রী কনসালটেন্সি ও মার্কেটিং পরিসেবা গ্রহণ করুন।

Share:
Facebook
Twitter
LinkedIn
Scroll to Top