অনলাইন বিজনেসে সফলতার রহস্য

অনলাইন বিজনেসে সফলতার রহস্য

প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের কল্যাণে পৃথিবী হাতের মুঠোয়  হয়ে যাওয়ায় নিত্য প্রয়োজনীয় ছোট থেকে বড়  যাবতীয় বস্তু ঘরে বসে সংগ্রহের চাহিদা দিনদিন বাড়ছে।  ঘরে বসে দশ মিনিটের সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলেই যখন হাজার হাজার পণ্য সামনে তখন হাট-বাজারে গিয়ে দশ দোকান দেখে যাচাই করে জিনিস-পত্র কেনার সময় কোথায়?  

বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যা মাসিক ৩.৭ বিলিয়ন। প্রাপ্তবয়ষ্ক নারী পুরুষ গড়ে দুই ঘন্টা সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করে থাকে। সুতরাং মার্কেটিং চ্যানেল হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়া কতটা ইম্পর্টেন্ট এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। 

অনলাইনে বিজনেস করতে আসার আগে অনেকের মনে কিছুটা ফ্যান্টাসি কাজ করে। তারা ভাবে প্রোডাক্টের ছবি তুলে ফেসবুক ইনস্ট্রাতে পোস্ট করলেই বুঝি হুহু করে সেল আসা শুরু হবে। কিন্তু বিজনেস স্টার্ট করার পর যখন আশানুরূপ ফল পায়না তখন দোষ হয় ভাগ্যের কিংবা অন্য কিছুর। 

একটা শপিংমলে বা হাটে একটা লিমিট পরিমাণ শো রুম বা দোকান থাকে। তারপরও মানুষ শপিংমলে ঢুকেই যেকোনো এক দোকান থেকে পণ্য কিনেনা। বরং সব ঘুরে ফিরে যেটাতে তাদের মন আকৃষ্ট হয় সেখান থেকেই পণ্য ক্রয় করে। এখন সোশ্যাল মিডিয়া এমন একটি শপিং প্লাটফর্ম যেখানে শোরুম বা দোকানের কোন লিমিট নাই৷ তাহলে আপনি আমি কীভাবে এই আশা করে বসে থাকতে পারি যে পোস্ট করলে বা বুস্ট করলেই সেল আসা শুরু হবে? 

এক্ষেত্রে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ অনলাইন শপের মধ্য হতে যদি আপনি এগিয়ে যেতে চান তবে অবশ্যই আপনাকে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।

  • প্রোডাক্ট সাশ্রয়ী মূল্য ও সহজলভ্য রাখার চেষ্টা করতে হবে। আপনার টার্গেট থাকবে অধিক সেলে অধিক লাভ।
  • প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি বেস্ট হতে হবে। মানুষ অনলাইনে পণ্য কেনার সময় পণ্যের স্বাদ কোয়ালিটি কিছুই দেখতে পারেনা। মূলত পণ্যের বাহ্যিক রুপ আর সুযোগ সুবিধা থেকে আকৃষ্ট হয়েই পণ্য কিনে।তাহলে পণ্য দেখলেই চোখ জুড়ায় এমন ফটোগ্রাফি কি দরকার না?
  • কন্টেন্ট ইউনিক ও সহজবোধ্য হতে হবে। এবং নিয়মিত ইউনিক ও হেল্পফুল কন্টেন্ট পাবলিশড করতে হবে। দোকানে যখন কাস্টমার যায় একজন দোকানদার কতরকম রসকষ দিয়ে কথা বলে কাস্টমারকে ইম্প্রেস করার চেষ্টা করে। তারপর একজন কাস্টমার পণ্য কিনে। অনলাইনে কন্টেন্ট কাস্টমারকে ইস্প্রেস করার একমাত্র হাতিয়ার।
  • প্রতিনিয়ত কাস্টমারের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন। এত এত শপ থাকতে হুট করে যেকোন শপ থেকে জিনিস কিনলে যে ঠকার সম্ভাবনা আছে সেটা যে কেউই বুঝে। তাই অনলাইনে যদি বিশ্বস্ততা অর্জন করতে চান তবে লং টাইম মার্কেটিং করুন। রি টার্গেটিং বুস্টের মাধ্যমে বারবার কাস্টমারের সামনে যান। একপর্যায়ে বারবার দেখতে দেখতে আপনি আপনার পেইজ কাস্টমারের কাছি পরিচিত হয়ে উঠবেন। ফলে আপনি যে পণ্য নিয়ে কাজ করছেন সেটা তাদের প্রয়োজন হলে অবশ্যই আপনাকে নক দিবে।

এই বিষয়ে একটা উদাহরণ দিলে বুঝবেন। অনলাইনে ইংলিশ কোর্স অনেকেই বিক্রি করে। কিন্তু টেন মিনিট স্কুল যেভাবে মুনজেরিন শহিদের ইংলিশ কোর্সের এড করে থাকে অনলাইন ইংলিশ কোর্সের নাম বললেই অনায়াসে আগে টেন মিনিট স্কুলের কথা মাথায় আসে। এখন টেন মিনিট স্কুল আমার কাছে একটা কোর্স বিক্রি করতে মিনিমাম ছয় মাস আমার সামনে তাদের এড পৌঁছানোর কারণে আমার মনে তারা একটা জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু তারা যদি এমনভাবে মার্কেটিং না করত কখনই তাদের থেকে কোর্স কেনার কথা ভাবতাম না।

অনলাইন বিজনেসে এভাবে রিটার্গেটিং করে মার্কেটিংটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি বারবার কাস্টমারের সামনে যেতে থাকুন। পরিচিত হোন। বিশ্বস্ততা অর্জন করুন। হেল্পফুল পোস্টের মাধ্যমে আপনার পেইজে তাদেরকে এংগেজ রাখার চেষ্টা করুন। একবার কাস্টমারের কাছে পরিচিত হতে পারলে আপনার দরজা খুলে যাবে। এক্ষেত্রে অধিকাংশ বিজনেসম্যানরা বিজনেস করতে আসে খুব সামান্য ধৈর্য নিয়ে। ফার্স্ট টাইম বুস্ট করেই কোটিপতি হয়ে যেতে চায়। এভাবে আসলে কোনকিছু সম্ভব না। আপনি যদি উপরোল্লিখিত কয়েকটি বিষয় খেয়াল করে বিজনেস করতে পারেন আশা করা যায় সফলতা আপনার কাছে ধরা দিবে।

বলা হয়ে থাকে অনলাইন বিজনেসে নাকি তেমন পুঁজি লাগেনা। কথাটি আংশিক সত্য হতে পারে। তবে অনলাইন বিজনেসে পুঁজি না লাগলেও মার্কেটিংয়ের জন্য একটা হিউজ পরিমাণ অংশ নিয়েই আপনাকে মাঠে নামতে হবে। যদি সফলতা পেতে চান। যাহোক অনলাইন বিজনেসে সফলতার রহস্য নিয়ে আজকে এপর্যন্তই।

Share:
Facebook
Twitter
LinkedIn
Scroll to Top